শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একমাত্র শিক্ষাই একটি জাতিকে সার্বিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে। শুধু সেতু, উড়ালসড়ক বা মেট্রোরেল দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিনা মূল্যে কয়েক শ টাকার পাঠ্যবই বিতরণ এবং নম্বর বাড়িয়ে প্রায় শতভাগ পাসের হার দেখিয়ে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষাব্যবস্থার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত!
পুরো শিক্ষাব্যবস্থা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, আমাদের শিশু-কিশোরেরা জানতে পারছে যে, তাদের শিক্ষকেরা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দেন, ফেল করলেও পাস করিয়ে দেন অথবা পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে দেন। এটা কি দুর্নীতি নয়?
এই শিক্ষক আর এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অসম্ভব। শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং ব্যবসাকে ‘ছায়া শিক্ষা’ নামে সরকারিভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টাও চলছে।
সমগ্র জাতি শিক্ষকদের এই অনৈতিক প্রাইভেট/কোচিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার অথচ আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কর্তাব্যক্তিরা রহস্যজনকভাবেই নীরব।
আর নীরব তো থাকতেই হবে কারণ,দেশের শিক্ষাখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি ও প্রকল্পের টাকা লুটপাটের ক্ষেত্রে এ সেক্টর সব দফতরকে ছাড়িয়ে গেছে। থানা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষা ভবন এমনকি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ঘুষের প্রভাব। স্কুলে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণসহ অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশনের টাকা তুলতে ঘুষ দিতে হয়।
রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাঈদুর রহমান রিমন ।
এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মেরামত, আসবাবপত্র ও শিক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা ও সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই চলে সীমাহীন চাঁদাবাজি। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে চলে সরকারি অর্থের যথেচ্ছ অপচয় আর লুটপাট। চলতি অর্থবছরের বাজেটে (২০১৯-২০২০) শিক্ষা খাতে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এ বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নে। ফলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে অনিয়ম-দুর্নীতিও বেড়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। নানা নামে ঘুষ নেন কর্মকর্তারা। এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি, টাইম স্কেল- সব এখান থেকেই হয় বলে পদে পদে হয়রানির শিকার হন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকরা। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিংবা কিন্ডার গার্টেনের অনুমতি নিতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হয়। হাইস্কুল ও কলেজের ক্ষেত্রে এই ঘুষের পরিমাণ সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা।
২০ সিন্ডিকেটে দাপুটে ২০০ জন: শিক্ষা খাতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর এবং এসব সংস্থাভুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র ঘুষ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে শিক্ষা ভবন থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। প্রভাবশালী কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেতার নেতৃত্বে গড়ে তোলা ২০টি লুটেরা সিন্ডিকেটের আওতায় দুই শতাধিক দাপুটে ব্যক্তি দেশজুড়ে দাপিয়ে বেড়ায়।
দেশ ও জাতিকে এই গভীর ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে হলে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
No comments